সিলেটে শিশু রাজন হত্যাকাণ্ড নিয়ে সারা দেশে তোলপাড়ের মধ্যেই এবার রাজধানীতে আরেক শিশুকে হত্যার দৃশ্য আপলোড করা হয়েছে ফেসবুকে। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার মস্তুল গ্রামে ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রায় তিন মাস আগে ঘটলেও ফেসবুকে ছবি আপলোড করা হয় গত সোমবার। চুরির অপবাদে নাজিমউদ্দিন নামে ১৪ ওই শিশুটিকে পিটিয়ে হত্যার পর হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয়া হয় পানিতে। শিশুটি নদীর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে খুনিরা। চাঞ্চল্যকর ওই মামলাটি বর্তমানে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ তদন্ত করছে।
৮ জুলাই সিলেটে শিশু সামিউল আলম রাজনকে হত্যার পর সেই দৃশ্য ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিবেকবান মানুষ। তার রেশ কাটতে না কাটতেই গত সোমবার রাজধানীর খিলক্ষেতে শিশু নামিজমউদ্দিনকে নির্যাতন ও মৃত্যুর সময় ধারণ করা ছবি ছাড়া হয় ফেসবুকে। নিহত শিশু নাজিমউদ্দিনের বাবা সালাম মিয়া বুধবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিনি তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়ায় থাকেন। এ বছরের ১২ এপ্রিল এক বন্ধুর সঙ্গে বাইরে যাওয়ার পর আর ছেলের খোঁজ পাচ্ছিলেন না তিনি। পরে ১৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নাজিমউদ্দিনের লাশ পাওয়া যায়।
খিলক্ষেত থানার ওসি নজরুল ইসলাম বুধবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল কথিত কবুতর চুরির অপরাধে নাজিমউদ্দিনেক আটক করে অমানুষিক নির্যাতন চালায় খিলক্ষেতের মস্তুল গ্রামের ৮ থেকে ১০ জন যুবক। এরপর হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয়া হয় বালু নদীতে। তিনদিন পর নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নাজিমউদ্দিনের লাশ ভেসে ওঠে। ১৮ এপ্রিল সাতজনের নাম উল্লেখ করে তার বাবা খিলক্ষেত থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ ওই ঘটনায় এজাহারনামীয় প্রধান আসামিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে। ওই সময় তারা মোবাইলে ধারণকৃত হত্যার ছবি উদ্ধার করে। তবে নিহত শিশুটির বাবা জানান, তার ছেলে ষড়যন্ত্রের শিকার। সে চুরির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না।
ফেসবুকে আপলোড করা ছবিতে দেখা গেছে, নির্যাতনের এক পর্যায়ে শিশুটি যখন মৃতপ্রায় তখন সে পানি খেতে চায়। এরই এক পর্যায়ে শিশুটিকে হাত-পা বেঁধে ফেলে দেয়া হয় নদীর পানিতে। হাত-পা বাঁধা শিশুটি নদীর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে হামলাকারীরা।
মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে খিলক্ষেত থানার ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, মামলাটি থানায় থাকা অবস্থায় এর তদন্ত সঠিক পথেই এগুচ্ছিল। এজাহারনামীয় তিন আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই চাঞ্চল্যকর বিবেচনায় মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। এখন তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে তা সিআইডি ভালো বলতে পারবে। এ ব্যাপারে জানতে সিআইডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
Leave a Reply